Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা

পানির পরিবেশ খারাপ হলে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী দ্বারা রোগ হতে পারে। এগুলো হলো-
রক্ত জমাট বাঁধা রোগ
রোগের কারণ ও লক্ষণ : স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। এ ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে আক্রমণ করে দেহের রক্ত জমাট বাঁধায়। হৃদপি-, কিডনি ও পাকস্থলী আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়। মাছের ক্ষুধা মন্দ হয়। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। মাছ মারা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : পুকুরে জৈব পদার্থ ব্যবহার কমাতে হয়। জাল রোদে শুকিয়ে জাল টানতে হয়। নিয়মিত চুন প্রয়োগ করা। খাদ্যের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ মিশিয়ে দিতে হয়।
ট্রাইকোডাইনিয়াসিস
রোগের কারণ ও লক্ষণ : ট্রাইকোডিনা নামক এককোষী পরজীবী দ্বারা এ রোগ হয়। বড় মাছের চেয়ে পোনা মাছের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি হয়। মাছের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ে। ফুলকায় গোলাকার হলদে সিস্ট বা ফুটকি দেখা যায়। চামড়ায় বালু কণার মতো ফুটকি দেখা যায়। মাছ শক্ত জিনিসে ঘা ঘষে। ফুলকার রক্তক্ষরণ স্থান ফুলে যায়। খাদ্য গ্রহণে অনীহা হয়। আক্রান্ত মাছ দ্রুত মারা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : পুকুরে প্রতি শতাংশে ২ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা। মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। জৈবসার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। আক্রান্ত মাছ ৫০ পিপিএম ফরমালিনে ২৪ ঘণ্টা বা ২৫০ পিপিএম ফরমালিনে ৩-৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে অথবা আক্রান্ত মাছকে ২০০ পিপিএম সাধারণ লবণ দ্রবণে সপ্তাহে ১ বার ২৪ ঘণ্টা গোসল করাতে হবে।
ড্যাকটাইলোগাইরোসিস রোগ-ফুলকা কৃমি রোগ
এ রোগ সাধারণত ফুলকা কৃমি নামে পরিচিত। এটি শুধু মাছের ফুলকা আক্রমণ করে।
রোগের কারণ ও লক্ষণ : ড্যাকটাইলোগাইরোসিস পরজীবী সংক্রমণে এ রোগ হয়। আক্রান্ত মাছের শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায়। দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়। ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়। ফুলকা পচে ও ফুলে যায়। মাছ দ্রুত মারা যায়। মাছ লাফালাফি করে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথর চুন ৩ মাস পর পর দিতে হবে। জৈবসার ও সম্পূরক খাদ্য কম দিতে হয়। আক্রান্ত মাছ ২০০ পিপিএম লবণ দ্রবণে সপ্তাহে একবার হিসাবে মোট দুইবার গোসল করাতে হবে। অথবা ৫০ পিপিএম ফরমালিনে আক্রান্ত মাছকে ১ ঘণ্টা ডুবিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।
কাইলোডোনেলিয়াসিস রোগ
রোগের কারণ ও লক্ষণ : কাইলোডোনেলা নামক পরজীবী সংক্রমণে এ রোগ হয়। আক্রান্ত মাছ প্রাথমিক পর্যায়ে পানির উপরিভাগে লাফালাফি করে। শ্বাস কার্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। মাছের দেহের বর্ণ নীলাভ বা ধূসর হয়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : পুকুরে জৈবসার প্রয়োগ স্থগিত রাখা। পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়া। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য প্রয়োগ করা। পুকুরের পানি দ্রুত পরিবর্তন করা। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে দুইবার চুন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ২০০ পিপিএম লবণ জলে ২৫ মিনিট অথবা ৫০ পিপিএম ফরমালিনে (৩৭%) ২৪ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে অথবা ০.১% পিপিএম তুঁত দ্রবণে ৩০-৬০ মিনিট মাছকে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
মাছের উকুন (Argulosis)
কারণ ও লক্ষণ : আরগুলাস নামক বহিঃপরজীবী দ্বারা মাছ আক্রান্ত হয়। মাছের দেহের রক্ত চুষে ক্ষত সৃষ্টি করে। দেহ পৃষ্ঠ ও পাখনায় উকুন লেগে থাকে। শক্ত কিছু পেলে মাছ দেহ ঘষে। মাছ লাফালাফি করে। দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পরজীবী খালি চোখে দেখা যায়। মাছ ক্লান্তহীনভাবে সাঁতার কাটে। আক্রান্ত স্থানের চারপাশ লালচে বর্ণ হয়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : পুকুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন দেয়া। জৈবসার প্রয়োগ কমিয়ে দেয়া। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরানো। ডিপটারেক্স (ডাইলকস, নেগুভন, টেগুভন) ০.৫ পিপিএম হারে পুকুরে প্রয়োগ করা। সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.৮ পিপিএম হারে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করা। প্রতি সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.২৫ পিপিএম পটাশ দ্রবণে   ৫-৬ মিনিট গোসল করাতে হবে।
কৃমি রোগ
বর্ষা ও শীতকালে নার্সারি ও লালন পুকুরে এ কৃমি বেশি দেখা যায়। এ জাতীয় কৃমি নাইলোটিকা মাছের ফুলকায় আক্রমণ করে এবং শিরা উপশিরা থেকে রক্ত চুষে নেয়।
লক্ষণ হলো :    রোগাক্রান্ত মাছ খুব অস্থিরভাবে চলাফেরা করে। মাছের দেহে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মাছের শ্বাসকষ্ট হয় ও পুকুর পাড়ে ভাসতে থাকে। পুকুরের পাড়ে কোনো কিছুতে গা ঘষতে থাকে। মাছ দুর্বল হয়। মাছের শ্বাসকষ্ট হয় ও মারা যেতে পারে।
প্রতিরোধ-প্রতিকার : জলাশয়ের শামুক পরিষ্কার করা। প্রতি শতাংশে পুকুরে ১ মিটার গভীরতার জন্য ৪০ গ্রাম ডিপ্টারেক্স ৭ দিন পরপর মোট ২ বার প্রয়োগ করতে হয়। ৩.৫ লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার ফরমালিন মিশিয়ে সেই দ্রবণে মাছ ৫ থেকে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
ক্ষতরোগ
বাংলাদেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির মাছ এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। অঢ়যধহড়সুপবং নামক ছত্রাক সংক্রমণে এ রোগ হয়। পরে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এরোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগে মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগের স্থানে গভীর ক্ষত হয়। মাছ দ্রুত মারা যায়। চোখ নষ্ট হতে পারে। ক্ষত স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না। ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধ ও পুঁজ বের হয়। মাছ দুর্বল হয় এবং ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। আক্রান্ত বেশি হলে লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : শুকনো মৌসুমে পুকুরের তলা শুকাতে হবে। শীতের শুরুতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ একত্রে প্রয়োগ করতে হবে। পোনা মজুদের আগে ২-৩% লবণ পানিতে পোনা গোসল করানো। জৈবসার প্রয়োগ সীমিত করা। জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা। প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৬০-১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা ১ গ্রাম ক্লোরোমাইসিটিন ওষুধ মিশিয়ে পরপর ৭-১০ দিন প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত মাছকে ৫ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ ঘণ্টা অথবা ১ পিপিএম তুঁতের দ্রবণে ১০-১৫ মিনিট গোসল করাতে হয়।
ড্রপসি-উদরফোলা-শোঁথরোগ
রোগের কারণ : ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এ রোগ হয়। আর লক্ষণ হলো : মাছের পেটে তরল পদার্থ জমে পেট ফুলে যায়। মাছ চিৎ হয়ে ভেসে উঠে। ভারসাম্যহীন চলাফেরা করে। হলুদ বা সবুজ রঙের পিচ্ছিল তরল পদার্থ বের হয়। দেহের পিচ্ছিল পদার্থ থাকে না।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : হাত দিয়ে পেট চেপে তরল পদার্থ বের করা। জৈব সার প্রয়োগ করা। চুন প্রয়োগ করা। টেরামাইসিন গ্রুপের ওষুধ খাদ্যের সাথে খাওয়াতে হবে অথবা ইনজেকশন দিতে হবে।
লেজ ও পাখনা পচা রোগ
রোগের কারণ ও লক্ষণ : অ্যারোমোনাস ও মিক্সো ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এ রোগ হয়। দেহের পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। লেজ ও পাখনায় সাদাটে দাগ দেখা যায়। লেজ ও পাখনায় পচন ধরে। লেজ ও পাখনার পর্দা ছিড়ে যায়। লেজ ও পাখনা খসে পড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ও রঙ ফ্যাকাশে হয়। মাছ দেহের ভারসাম্য হারায়। মাছ ঝাঁকুনি দিয়ে চলাফেরা করে। আক্রান্ত স্থানে তুলার মতো ছত্রাক জন্মায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : পুকুরে জৈবসার প্রয়োগ কমাতে হবে। নিয়মিত হররা বা জাল টেনে পুকুরের তলার বিষাক্ত গ্যাস কমাতে হবে। মজুদকৃত মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা। প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ২৫ মিলিগ্রাম টেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে পর পর ৭ দিন দিতে হবে। পোনা মাছে ১ পিপিএম তুঁত দ্রবণে সপ্তাহে ২ দিন চুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে।
আঁইশ উঠা রোগ
রোগের কারণ ও লক্ষণ : অ্যারোমোনাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। মাছের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। আঁইশ বাঁকা হয়। সামান্য ঘষা বা আঘাতেই আঁইশ উঠে যায়। লেজ অবশ হয়। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ : পুকুরে জৈবসার প্রয়োগ কমাতে হবে। প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন নিয়মিত প্রয়োগ করা। জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা। এক লিটার পানিতে ২-৩ মিলি গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলিগ্রাম তুঁত মিশিয়ে মাছকে গোসল করালে এ রোগ ভালো হয়। প্রতি কেজি খাদ্যে ১ গ্রাম ক্লোরোমাইসিটিন মিশিয়ে মাছকে কমপক্ষে ৭ দিন খাওয়াতে হবে।

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ*
*কৃষি প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল; বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত লেখক; ০১৭১১-৯৫৪১৪৩


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon